বারাণসী হলো বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত নগরী। ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বারাণসী শহরটি স্থানীয়ভাবে বেনারস নামে এবং বাঙ্গালীদের কাছে কাশী নামে অধিক পরিচিত। বারাণসী নামটি সম্ভবত বরুনা ও ওসি এই দুটি গঙ্গার উপনদী থেকে এসেছে। অনেক ঐতিহাসিক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বারাণসী ৫০০০ বছরেরও পুরনো। প্রাচীনকাল থেকে বারাণসীর সৌন্দর্য, আকর্ষণ এবং আধ্যাত্মিকতার টানে মানুষ বারে বারে এই জীবন্ত শহরে ছুটে আসে । অনেকে মনে করেন যদি জীবনে নির্বাণ লাভ করতে হয় তাহলে এখানে মৃত্যুবরণ করাই শ্রেয়।
বারাণসিকে ভারতের আধ্যাত্বিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান শিব নিজেই এই বারাণসি শহরের প্রতিষ্ঠা করেন। ঋগ্বেদ-এ এই শহরকে কাশী নাম উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দুধর্ম ও জৈনধর্মের সাতটি পবিত্রতম শহরের একটি হলো বারাণসী। বৌদ্ধ ও শিখ ধর্মের প্রসারেও এই শহরের অবদান অনস্বীকার্য। প্রাচীন স্থাপত্য, বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ-এর সাথে এখানকার সাধু-সন্ন্যাসীদের আত্মিক যোগাযোগ এক অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে এখানে।
বারাণসীকে কেউ কেউ মন্দির নগরী,পবিত্র নগরী, ভারতের ধর্মীয় রাজধানী, আলোক নগরী, শিক্ষা নগরী বলে ও অভিহিত করেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, শহরটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত গঙ্গা এখানে উত্তর বাহিনী। হিন্দু ও জৈন ধর্মের সাতটি পবিত্র শহরের মধ্যে অন্যতম হলো বারাণসি। বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ ও প্রচারে বারাণসি শহরের গুরুত্ব অন্যতম। বারাণসীর ইতিহাস সমগ্র বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম সম্প্রদায়ের ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন। এছাড়া হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সংগীত-এর বারাণসী ঘরানার জন্মও এখন থেকে হয়েছে। বারাণসীর মসলিন, বেনারসী শাড়ি, রেশমের বস্ত্র, হাতির দাঁতের কাজ , বিভিন্ন রকম ভাস্কর্য ও সুগন্ধি দ্রব্য খুবই বিখ্যাত।
বারাণসীর দর্শনীয় স্থান
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির হলো বারাণসী তথা ভারতের এক বিখ্যাত মন্দির। ভগবান শিবের বারোটি পবিত্রতম জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অন্যতম কাশী বিশ্বনাথ মন্দির। এখানে শিব “বিশ্বনাথ” বা “বিশ্বেশ্বর” নামে খ্যাত। সাড়ে ১৫ মিটার উঁচু এই মন্দিরের চূড়াটি সোনা দিয়ে মোড়া বলে অনেকে এই মন্দিরকে “স্বর্ণমন্দির” বলে থাকেন।
দশাশ্বমেধ ঘাট
কিংবদন্তী অনুযায়ী দশ-অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় ব্রহ্মা এখানে দশটি ঘোড়া বলি দিয়েছিলেন। অন্য একটি মতে ব্রহ্মা শিবকে স্বাগত জানাতে এই ঘাটতি তৈরি করেছিলেন। বারাণসীর গঙ্গার ধরে অবস্থিত এটি একটি বিখ্যাত শ্মশানঘাট।
মণিকর্ণিকা ঘাট
মণিকর্ণিকা ঘাট বারাণসীর গঙ্গার ধরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত শ্মশানঘাট। হিন্দু ধর্ম মতে এখানে দেবী সতীর কর্ণ কুন্তল বা কানের দুল পড়েছিল। মানুষের বিশ্বাস এই ঘাটে মৃতদেহ সৎকার করলে আত্মার মুক্তিলাভ ঘটে।
রামনগর ফোর্ট
রামনগর ফোর্ট বারাণসীর গঙ্গার পূর্ব তীরে অবস্থিত। কাশীর মহারাজা বলবন্ত সিং ১৭৫০ সালে রাজপুতানা ঘরানাতে বেলেপাথরের এই প্রাসাদ বা দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন। এখানে একটি জাদুঘর এবং হনুমানের একটি মন্দির রয়েছে।
সংকট মোচন মন্দির
সংকট মোচন মন্দির হলো হিন্দু দেবতা হনুমানের এক বিখ্যাত মন্দির। অসি নদীর তীরে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই এই মন্দিরটি অবস্থিত।
কীভাবে যাবেন ?
কলকাতা, দিল্লি, লখনউ , এলাহাবাদ, কানপুর ও থেকে বেনারস যাওয়ার বহু ট্রেন রয়েছে। রেলপথে দূরত্ব ৭৬৩ কিলোমিটার আর সড়ক পথে দূরত্ব ৬৭০ কিলোমিটার। শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে বেনারস যাওয়ার কয়েকটি ট্রেন হল- দুন এক্সপ্রেস (সকাল ৮.২৫), বিভূতি এক্সপ্রেস (রাত ৮ টা), উপাসনা এক্সপ্রেস (দুপুর ১ টা – বুধ -শুক্র) কুম্ভ এক্সপ্রেস (মঙ্গল -শুক্র বাদে প্রতিদিন দুপুর ১ টা) ইত্যাদি। প্লেনে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বারানসী বিমানবন্দরে যাওয়া যায়। ইন্ডিগো, ভিস্তারা, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট। বারানসী বিমানবন্দর মূল শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ট্রেনের টিকিটের জন্য এই site -এ ক্লিক করতে পারেন।
কোথায় থাকবেন ?
বেনারসে থাকার জন্য অনেক হোটেল, গেস্ট হাউস, হোম স্টে প্রভৃতি আছে। এগুলি বিভিন্ন দাম ও মানের মধ্যে নেওয়া যেতে পারে।