সান্দাকফু ভ্রমণ
সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। সান্দাকফু কথার মানে হলো ‘বিষাক্ত লতার পাহাড়’। নেপালের নিলম জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার সিঙ্গলিলা পর্বতের সর্বোচ্চ শিখর হল সান্দাকফু। উচ্চতা ১১৯৩০ ফুট। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পাঁচটি পর্বত শৃঙ্গের চারটি এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্গা, লোৎসে এবং মাকালু পাহাড়কে সান্দাকফু থেকে দেখা যায়। মানেভঞ্জন থেকে চিত্রে, মেঘমা, টংলু , টুম্বলিং, গৈরিবাস, কালিপোখরি হয়ে সান্দাকফু পৌঁছানো যায়। রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন রকমের রডোডেনড্রন, পাইন, বাঁশ গাছের প্রজাতির ছোটো ছোটো গাছ ও নানা ধরনের নাম না জানা আরো অনেক গাছের জঙ্গল। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝেই উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জের কুম্ভকর্ণ, কুম্ভকর্ণ পূর্ব, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাউন্ট পাণ্ডিম প্রভৃতি শৃঙ্গগুলি।
চিত্রে
মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু যাওয়ার পথে ৩ কিলোমিটার দূরে এক অসাধারণ জায়গা হলো চিত্রে। নেপালের মধ্যে অবস্থিত একটা ছোটো গ্রাম। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮৩৪৮ ফুট ওপরে অবস্থিত। এখানকার সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ হলো চিত্রে মনাস্ট্রি। বরফ সাদা কাঞ্চনজঙ্ঘা এখন থেকে অসাধারণ লাগে।
মেঘমা
চিত্রে থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে আরো একটি সুন্দর জায়গা মেঘমা। নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ‘মেঘেদের মা’। এখানে ও একটি সুন্দর মনাস্ট্রি রয়েছে। এই মনাস্ট্রিতে বুদ্ধের ১০৮ টি আলাদা আলাদা রূপ তুলে ধরা হয়েছে। সান্দাকফু যাওয়ার পথে সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক-এলাকার সবচেয়ে পরিছন্ন গ্রাম।
টুংলিং
মেঘমা থেকে টংলু হয়ে টুংলিং -এর দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। টংলুর উচ্ছতা ১০০৭০ ফুট (৩০৭০ মিটার)। ভারত ও নেপাল সীমান্তে এক নিরিবিলি গ্রাম এই টুংলিং। সুন্দর কংক্রিটের রাস্তার একদিকে ভারত আর অন্যদিকে নেপাল। ভারতের দিকে অসাধারণ রডোড্রেনডনের সৌন্দর্য এক কোথায় অনবদ্য। এখানে থাকা ও খাবার বেশ কয়েকটি সুন্দর হোটেল ও হোমস্টে রয়েছে যেগুলির মান বেশ ভালো। কুয়াশা না থাকলে এখন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা স্বপ্নরাজ্যের মতো।
কালিপোখরি
টুংলিং থেকে গৈরিবাস হয়ে সান্দাকফু পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বনকারীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান হলো কালিপোখরি। ‘কালী‘ মানে অন্ধকার আর ‘পোখরি’ মানে লেক বা পুকুর। স্থানীয় নেপালি গ্রামবাসীরা এই লেকের ধারে পুজো করে। এর জলে কারোর ডুব দেওয়া বা সাঁতার কাটা একেবারে নিষিদ্ধ। কালিপোখরি থেকে সান্দাকফুর দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার।
কীভাবে যাবেন সান্দাকফু ?
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে এলে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছানো। বাসে এলে শিলিগুড়ি। ওখান থেকে মানেভঞ্জন-এর দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার। মানেভঞ্জন হলো সান্দাকফু ঢোকার দরোজা। নেপালি ভাষায় মানেভঞ্জন শব্দের অর্থ দুটি পর্বতের মিলনস্থল। মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু যেতে গাড়ির ভাড়া প্রায় ৪৫০০ টাকা মতো পরে। ওখান থেকে সিঙ্গালিলা পার্কে ব্রিটিশ আমলের ল্যান্ড রোভার বা বোলেরো গাড়ির টিকিট ৪০০ টাকা ও মাথা পিছু ১২০ টাকা টিকিট কেটে চেক পোস্ট পেরোনো প্রয়োজন। মানেভঞ্জন থেকে থেকে সান্দাকফুর দূরত্ব ৩১ কিলোমিটার। সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা।
কখন যাবেন সান্দাকফু ?
বর্ষাকাল আর প্রচন্ড শীত এড়ানোই ভালো। বছরের বাকি যে কোনও সময় সান্দাকফু যাওয়া যেতে পারে।
কোথায় থাকবেন ?
টংলু ও সান্দাকফুতে টেকার্স হাট আছে। টুমলিং, গৈরীবাস, কালিপোখরি ও বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। তবে তুমলিংএ সিদ্ধার্থ লজ এবং সান্দাকফুতে হোটেল সান রাইজ হোটেলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা খুব ভালো।
ট্রেন টিকিটের খোঁজ খবর https://www.irctc.co.in/nget/train-search