উত্তর-পূর্ব ভারতে “সেভেন সিস্টার “ নামে পরিচিত সাতটি রাজ্যের অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা রাজ্য হল মেঘালয়। এই রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ের উপর প্রায় ৪৯০৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম শৈল শহর। প্রচুর বৃষ্টিপাত, পাইনের জঙ্গল, অজস্র জলপ্রপাত, একাধিক লেক নিয়ে গড়ে উঠেছে একসময়ের “প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড” বর্তমানের শিলং। মূলত ব্রিটিশ আমলে ইউরোপীয়ান লোকেরা বিশেষ করে স্কটল্যান্ডের নাগরিকরা এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। ওই সময় শিলং আসামের রাজধানী ছিল। ব্রিটিশদের হাতে তৈরি প্রচুর কান্ট্রিহাউস এখনো এখানে দেখা যায়। ১৮৯৭ সালে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে শিলং শহরের প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হয়। পরে এই শহরকে আবার গড়ে তোলা হয়েছে।
শিলং পিক
শিলং এর সবচেয়ে উঁচু জায়গা শিলং পিক। শিলং শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে প্রায় অবস্থিত শিলং পিক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ফুট উঁচুতে মেঘালয়ের সবচেয়ে উঁচু চূড়া থেকে খাসি পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য এবং শিলং শহরকে খুব ভালো ভাবে উপভোগ করা যায় ।
উমিয়াম লেক
গৌহাটি থেকে সড়ক পথে শিলং যাওয়ার পথে শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার আগে অবস্থিত মেঘালয়ের বৃহত্তম লেক গুলির একটি উমিয়াম লেক। বিভিন্ন রকম ওয়াটার স্পোর্টস কায়াকিং, ওয়াটার সাইক্লিং, ওয়াটার স্কুটারিং ও বোটিং করার জন্য এই লেক আডভেঞ্চারাস ভ্রমণকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
ওয়ার্ডস লেক
ওয়ার্ডস লেক শিলং শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। স্থানীয় ভাবে এই লেক পোলক লেক নামেও পরিচিত। এটি একটি কৃত্রিম লেক। ১৮৯৪ সালে আসামের ব্রিটিশ কমিশনার স্যার উইলিয়াম ওয়ার্ড মস্তিক প্রসূত এই কৃত্রিম লেকটি শিলংয়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
এলিফ্যান্টা ফলস
শিলং শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এলিফ্যান্টা ফলস বা হাতি ঝর্ণা। এই ফলটি তিনটি ধাপে অবস্থিত। শিলং বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় এলিফ্যান্টা ফলস। তবে বর্ষাকালে না গেলে এর অতুলনীয় রূপকে ভালো করে চাক্ষুস করা যায় না।
চেরাপুঞ্জি
শিলং শহর থেকে পারে ৫৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি শহর। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত অঞ্চল হিসাবে একসময় চেরাপুঞ্জির নাম ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ -এ উঠেছিল। বর্তমানে এই রেকর্ড মৌসিনরামের দখলে। এখানে প্রচুর পরিমানে কমলা পাওয়া যায় বলে একে ‘কমলা দ্বীপ’ও বলা হয়। তবে এখানকার আসল নাম সোহরা। ব্রিটিশদের মুখে সোহরা বদলে গিয়ে হয় ‘চেরা’, পরে চেরাপুঞ্জি। এখানে যাওয়ার পথে পড়ে এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিছন্ন গ্রাম মাওলাইনং।
মৌসিনরাম
মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে মৌসিনরাম-এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। মৌসিনরাম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে আদ্রতাযুক্ত স্থান। বছরে প্রায় ১১ হাজার ৮৭২ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় এখানে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃস্টিপাতযুক্ত স্থান হলো মৌসিনরাম। এখানকার দর্শনীয় উল্লেখযোগ্য স্থান গুলি হলো মাওজুমবুইন গুহা ও জাকরেম হট স্প্রিং।
শিলং ভ্রমণের সময়
শিলং সারা বছরই এখন যাওয়া যেতে পারে। রাস্তাঘাট এখন অনেকটা ভালো। সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বেড়াবার পক্ষে সেরা সময়। বঙ্গোপসাগর থেকে আসা দক্ষিণ পূর্ব মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের সমভূমি এলাকা পেরিয়ে একানকার পাহাড়ে এসে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। তাই বর্ষাকালের প্রকৃতি উপভোগ ও ঝর্ণাগুলিকে প্রাণবন্ত চেহেরায় দেখার মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা পেতে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে যাওয়া যেতে পারে।
শিলং কীভাবে যাবেন
শিলং যেতে হলে আসামের গৌহাটি শহর হয়ে যেতে হবে। ভারতের যে কোনো প্রান্ত থেকে গৌহাটি শহরে আসার রেল ও বিমান যোগাযোগ আছে। গৌহাটি থেকে শিলংয়ের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার মতো। গাড়িতে করে যেতে ৩ ঘন্টা মতো সময় লাগে। কলকাতা থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেস (বিকেল ৩.৫৫), কামরূপ এক্সপ্রেস (সন্ধে ৬.৩০), কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (সকাল ৬. ৩৫), কলকাতা – আগরতলা স্পেশাল (রাত ৯.৪০) প্রভৃতি গাড়িতে করে সরাসরি গৌহাটি পৌঁছে যাওয়া যায়। সময় লাগে প্রায় ১৮-২০ ঘন্টা। ট্রেনে ভাড়া লাগে সাধারণ স্লিপারে প্রায় ৫০০ টাকা, থ্রি -টায়ারে প্রায় ১৪০০ টাকা, টু-টায়ারে প্রায়২০০০ টাকা এবং ফার্স্ট ক্লাসে প্রায় ৩৩০০ টাকা। আর প্লেনে কলকাতা থেকে গৌহাটি সময় লাগে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট মতো। প্লেনের ভাড়া শুরু প্রায় ৪৫০০ টাকা থেকে।
ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বুকিং করতে হলে এখানে ক্লিক করুন।
কোথায় থাকবেন
শিলং বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের থাকার জন্য সবচেয়ে পছন্দের জায়গা শিলং শহরের পুলিশ বাজার এলাকা বা থানা রোড এলাকা। সব সময় জমজমাট এই এলাকা। এখানে নানা দামের ও মানের হোটেল পাওয়া যায়।