বিষ্ণুপুর
বিষ্ণুপুর হলো লাল মাটির দেশ। একসময়ের মল্ল রাজাদের রাজধানী। সপ্তম শতাব্দী থেকে প্রায় ১২০০ বছর ধরে রাজত্ব করেছেন মল্ল রাজারা। এখানকার মন্দিরগুলিতে অসাধারণ টেরাকোটার কাজ দেখতে সারা বিশ্বের পর্যটক ছুটে আসে। প্রায় এক হাজার বছর ধরে বিষ্ণুপুর মল্ল রাজাদের রাজধানী ছিল। বিষ্ণুপুরকে বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করেছিল মল্ল রাজা বীর হাম্বীর এবং তাঁর উত্তরসূরী রাজা রঘুনাথ সিংহ ও বীর সিংহ। তাঁদের পৃষ্ঠ পোষকতায় এখানকার অধিকাংশ টেরাকোটা মন্দির তৈরি হয়েছিল। এই সকল রাজাদের আমলে হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সংগীতের বিষ্ণুপুরী ঘরানা ও চিত্রকলার গুনগান সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। এছাড়া এখানকার পোড়ামাটির কারুকাজ ও বালুচরী শাড়ি জগৎ বিখ্যাত।
রাসমঞ্চ
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার এক অনন্য সাধারণ পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন রাসমঞ্চ। ১৬০৭ সালে রাজা মল্যরাজ বীর হাম্বীর ৩৫ ফুট উঁচু ও ৮০ ফুট চওড়া এই অনবদ্য ইটের তৈরি রাসমঞ্চটি নির্মাণ করেন। এই মঞ্চের চূড়া ধাপে ধাপে পিরামিডের আকারে উপরে উঠে গিয়েছে। ১৬০০ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত রাস উৎসবের সময় বিষ্ণুপুর শহরের সমস্ত রাধাকৃষ্ণ মূর্তি এখানে আনা হতো।
দলমাদল কামান
রাসমঞ্চের দক্ষিণে ২৯৬ মন (প্রায় ১১৮৪০ কেজি) ওজনের মাকড়া পাথর গলানো লোহা দিয়ে তৈরি দলমাদল কামানটিতে এত বছর পরেও এতোটুকু মরচে পড়েনি। কিংবদন্তি বরগি হামলার সময় মল্ল রাজাদের কুলদেবতা স্বয়ং মদনমোহনের নির্দেশে কামান থেকে গোলাবর্ষণ হত।
জোড়বাংলা মন্দির
১৬৫৫ সালে রাজা রঘুনাথ সিংহ জোড়বাংলা মন্দির নির্মাণ করেন। বাংলার চালা শৈল্পিক স্থাপত্যে অলংকৃত পোড়া মাটির এই মন্দিরের গায়ে মহাভারতের নানান ঘটনা, শিকার দৃশ্যের চিত্ররূপ অসাধারণ।
মদন মোহন মন্দির
একটি চূড়া দ্বারা খোদাই করা কার্নিশ সহ বর্গাকার সমতল ছাদযুক্ত মদন মোহন মন্দিরটি নির্মাণ করেন রাজা দুর্জন সিংহ। এখানে রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া বিষ্ণুপুরের লাল বাঁধ, বড়ো পাথরের দরজা, যোগেশচন্দ্র পুরাকীর্তি সংগ্রহালয়, পোড়ামাটির শিল্পের জন্য পরশুরা গ্রাম ইত্যাদি বিখ্যাত।
কীভাবে যাবেন?
সড়কপথে কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুরের দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। আর রেলপথে হাওড়া থেকে বিষ্ণুপুরের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার।
সাঁতরাগাছি থেকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস (০৬.২৫), আরণ্যক এক্সপ্রেস (০৭.৪৫ রবিবার বাদে) হাওড়া থেকে পুরুলিয়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস (১৬.৫০), শিরোমনি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার (১৭.৪৫) হাওড়া চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে (রাত ১২.১৫) বিষ্ণুপুরে পৌঁছে যাওয়া যায়। এছাড়া ধর্মতলা থেকে সরাসরি বাসেও যাওয়া যায়।
ট্রেনের টিকিটের খোঁজ খবর – https://www.irctc.co.in
কোথায় থাকবেন ?
বিষ্ণুপুর-এ থাকার জন্য নানা মানের নানা ধরনের হোটেল ও সরকারি লজ রয়েছে। বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজ, মেঘমল্লার লজ , মোনালিসা লজ, সাগর লজ , হোটেল অন্নপূর্ণা, রিসোর্ট জোড়বাংলা প্রভৃতি।