ছোটোনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত ঝাড়খন্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলায় অবস্থিত ঘাটশিলা হলো একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার নদী, পাহাড়, জঙ্গল, টিলা, ড্যাম, ঝরনা, ঢেউ খেলানো প্রান্তর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে অতি প্রিয়। কলকাতা থেকে মাত্র ২১৫ কিলোমিটার দূরে এই মনোরম পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত।
গৌরীকুঞ্জ
বাংলা সাহিত্য ও চলচিত্রে অমর সৃষ্টি ‘অপুর” স্রষ্টা প্রকৃতি প্রেমিক বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের বসতবাড়ি ‘গৌরীকুঞ্জ’ সাহিত্য প্রিয় বাঙালির পীঠস্থান।
সোনা রঙা চিক চিক করা বালি ও ছোটো বড়ো শিলার মধ্য দিয়ে তির তির করে বয়ে যাওয়া সুবর্ণরেখা মনের হারিয়ে ছন্দ ফিরিয়ে আনে। কখনো ধীর শান্ত আবার কখনো দুরন্ত স্রোতস্বিনী সুবর্ণরেখা বয়ে চলেছে তার নিজের খেয়ালে। শাল-পিয়াল-পলাশের জঙ্গল, গ্রামীন আদিবাসী ও তাদের জীবনযাত্রার সাথে বয়ে চলা সুবর্ণরেখা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ঘাটশিলা আর গালুডি শহর। পাশেই মৌভাণ্ডারে আছে একটি তামার খনি। স্টেশন থেকে ফুলডুংরি যাওয়ার পথে পড়ে, ঘাটশিলা কলেজ। একসময় ফুলডুংরি টিলার মাথা থেকে অসাধারণ সূর্যাস্ত এবং ঘাটশিলা শহরকে ভারী সুন্দর দেখতে লাগতো। তবে বর্তমানে জাতীয় সড়কের ধারে শাল-মহুয়া মোড়া ফুলডুংরি টিলায় অযত্নের ছাপ স্পষ্ট।
বুরুডি লেক
ঘাটশিলা থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বুরুডি লেক। ঘন নীল সবুজ শান্ত জলের মাঝে কোথাও কোথাও জেগে রয়েছে সবুজ গাছে ভরা টিলা।আর জলে ছায়া পড়া পাহাড়ের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনকে সত্যিই ভরিয়ে দেয়। লেকে বোটিং করার মজাই আলাদা। লেকের ধারে গড়ে ওঠা খাবারের দোকান গুলোতে অর্ডার অনুযায়ী টিফিন বা লাঞ্চ করে নেওয়া যেতে পারে। সারল্য ও আন্তরিকতা ভরা মানুষগুলির কাছ থেকে পাওয়া খাবারের স্বাদ মন ভরিয়ে দেয়। বুরুডি লেকের পাশ দিয়ে আরো পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে ধারাগিরি জলপ্রপাতের। চারদিকে শুধু সবুজ আর গভীর জঙ্গলের নির্জনতার মাঝে ছায়াঘেরা আলো- অন্ধকারে পাহাড়ের গা থেকে নেমে আসছে জলধারা।
গালুডি
ঘাটশিলা থেকে গালুডি ব্যারেজ প্রায় ১১ কিলোমিটার। সুবর্ণরেখা নদীর ওপর এই ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার দৃশ্য দারুন দেখতে লাগে। এখান থেকে ৬/৭ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের মাথায় প্রাচীন সিদ্ধেশ্বর মন্দির প্রান্তর থেকে চারিদিকের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পাহাড়ের নীচ থেকে ওপরে ওঠার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।
এছাড়া সিদ্ধেশ্বর মন্দির, জাদুগোড়ায় অবস্থিত প্রাচীন রংকিনী দেবীর মন্দির দেখে জামশেদপুর যাওয়ার পথে নাড়োয়া পিকনিক স্পটে অবশই যাওয়া প্রয়োজন। জঙ্গল-পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট নদীর আশপাশের জায়গাগুলি অতি মনোরম। অসাধারণ রাস্তার দুপাশের প্রকৃতিকে দৃশ্য চোখ ভোরে দেখে নেওয়া যেতে পারে। টাটানগর হয়ে জুবিলী পার্ক, ডিমনা লেক, দলমা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি, চান্ডিল লেক ও ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে।
কীভাবে ঘাটশিলা যাবেন ?
কলকাতা বা হাওড়া থেকে ঘাটশিলার দূরত্ব রেল পথে ২১২ কিলোমিটার ও সড়ক পথে প্রায় ২৫০কিলোমিটার। টাটানগর থেকে ঘাটশিলার দূরত্ব ৪২ কিমি। হাওড়া থেকে বরবিল জন শতাব্দী এক্সপ্রেস (প্রতিদিন ৬.২০-৮.৫৬), ইস্পাত এক্সপ্রেস (৬.৩৫ – ৯.৩৪), হাওড়া রাঁচি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (বৃহস্পতি, শুক্র – দুপুর ১২.৫০ – ১৫.৪০), টিটলাগড় এক্সপ্রেস ( সোম, বুধবার ও শনিবার সকাল ৬.৩৫ – ৯.২৬), স্টিল এক্সপ্রেস ( প্রতিদিন ১৭.২৫ – ২০.২১) প্রতিদিন যায়। মাত্রা ৩ ঘন্টায় ট্রেনে করে সরাসরি ঘাটশিলা পৌঁছে যাওয়া যায়। এছাড়া অটো, টাটা সুমো, মারুতি বা জিপ ভাড়া করে দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখা যায়।
ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বুকিং করতে হলে –
Website:-https://www.irctc.co.in/nget/train-search
ঘাটশিলায় কোথায় থাকবেন ?
ঘাটশিলায় থাকার জন্য অনেক হোটেল ও রিসোর্ট আছে। যেমন সুহাসিতা রিসোর্ট, হোটেল বিভূতি বিহার, আরণ্যক রিসোর্ট, মুক্তধারা নেচার রিসোর্ট , রিসোর্ট সুবর্ণা ভিলা, রিভার ভিউ রিসোর্ট, বনবীথি গেস্ট হাউস প্রভৃতি। ভাড়া মোটামুটি ৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা।
ঘাটশিলার উপরে ভিডিও দেখতে গেলে এখানে ক্লিক করুন।