অযোধ্যা পাহাড় | পুরুলিয়া | Ajodhya Pahar | Puruliya

অযোধ্যা পাহাড়

পশ্চিমবঙ্গের ভ্রমণ মানচিত্রে পুরুলিয়ার  অযোধ্যা পাহাড় বর্তমানে প্রায় ওপরেই সারিতে রয়েছে একথা অনায়াসেই বলা যায়।  অযোধ্যা পাহাড় শ্রেণি হলো পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো পর্বতশ্রেণি এবং  ছোটো নাগপুর মালভূমির অন্তর্গত দলমা পাহাড়ের একটি অংশ।  প্রায় ২০০০ ফুট গড় উচ্চতা বিশিষ্ঠ  এই পর্বত শ্রেণির সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ গোর্গাবুরু এর উচ্চতা ৮৫৫ মিটার বা ২৮২২ ফুট।  পাহাড়ের মাথাটি প্রায় সমতল যা কিনা হিল টপ নাম পরিচিত। শাল, সেগুন, মহুয়া, শিরীষ গাছে ঢাকা  ছোটো ছোটো প্রায় ৪০/৪৫ টি আদিবাসী গ্রাম পাহাড়ের এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে রং বদলায় অযোধ্যা পাহাড়ের। গভীর জঙ্গলের মধ্যে হাতি, হরিণ, বন্য শূকর, নেকড়ে ও চিতা বাঘের বাস। প্রতি বুদ্ধ পূর্ণিমায় স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব শিকার উৎসব ‘দিসুম সেন্দ্রাকে’ কেন্দ্র করে সেজে ওঠে অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যা পাহাড়ে ওঠার অনেক গুলি শর্টকাট রাস্তা বা ট্রেকিং রুট থাকলেও মূলত দুটি পাকা রাস্তা দিয়ে এই পাহাড়ে ওঠা যায়।  একটি হলো পুরুলিয়া শহরের দিক থেকে সিরকাবাদ এবং অন্যটা হলো বাঘমুন্ডি। রাস্তার ধরে মনোরম দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাছাড়া মাটির দেয়ালে রাঙানো আদিবাসীদের ঘর গুলিও চমৎকার।

Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
অযোধ্যা পাহাড় হিল টপ খেলার মাঠ

 অযোধ্যা পাহাড়ের হিল টপ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ময়ূর পাহাড়। এই পাহাড়ের চূড়া  থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অকল্পনীয় দৃশ্য দেখা যাই। এখানে একটি হনুমান মন্দির রয়েছে। 

Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
সীতাকুন্ডু

     লোকমুখে প্রচলিত অজ্ঞাতবাসে থাকার সময় শ্রী রামচন্দ্র এই অযোধ্যা পাহাড়ে বেশ  কিছুদিন থেকেছিলেন। এখানে থাকার সময় একদিন সীতার প্রচন্ড জলতেষ্টা পেলে শ্রী রামচন্দ্র তীর নিক্ষেপ করে পাথরের বুক থেকে জল বের করেন। অবিরাম জলের ধারায় সীতা তার তৃষ্ণা মিটিয়ে ছিলেন।এই স্থানটি সীতাকুন্ডু নাম পরিচিত। গরম কালে অন্যান্য জলের উৎসে জল পাওয়া না গেলে ও এখানে জল পাওয়া  যায়।  

Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
চড়িদা গ্রাম

 বাঘমুন্ডি শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে চড়িদা গ্রাম। ছৌ-নাচের আঁতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত ড়িদা গ্রাম। বংশ পরম্পরায়  ছৌ নাচের রঙ বেরঙের মুখোশ তৈরি  করা এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের পেশা।  

পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ

পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ হলো ৯০০ মেগাওয়াটের জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে ২২৫ ওয়াটের ৪ টি ইউনিট আছে। তুর্গা পাম্প স্টোরেজ নাম নতুন একটি ১০০০ মেগাওয়াটের  পাম্প স্টোরেজ এখানে তৈরি হচ্ছে যা ২০২২ সাল নাগাদ চালু হওয়ার কথা।   

Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
তুর্গা ডাম
দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশ, সবুজ জঙ্গল আর অসংখ্য ছােটো পাহাড় নিয়েই গড়ে উঠেছে আদিবাসী গ্রাম মাঠা। নির্জন-নিরালায় টিলাটংয়ে মন্দির, কুদলুং নদী মাঠাকে মােহময় করে তুলেছে। মাঘ মাসের প্রথমদিনে মাঠার পাহাড় পুজোকে কেন্দ্র করে নাচ-গান-বাজনার সঙ্গে মেলা বসে। বাতাসে ভাসে ঝুমুরের তান।
 
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
মাঠা পাহাড়

মাঠা থেকে ৪ কিলােমিটার এগােলেই ৮০০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে গড়া এক অনন্য শিল্পকর্ম পাখিপাহাড়। দেখে মনে হবে গােটা পাহাড়টাই যেন ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে। শিল্পী চিত্ত দে প্রায় একক প্রচেষ্টায় ১৯৯২ সালে এই ‘ফ্লাইট টু হারমনি’ গড়ে তােলেন।

Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
মার্বেল লেক
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
মার্বেল লেক
 পৃথিবীর চতুর্থ সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রোজেক্টের কাজ করার সময়  বিস্ফোরণ করে পাথর ভাঙতে গিয়ে পাথরের খাঁজে মার্বেল লেকের জন্ম। বর্তমানে যা অযোধ্যা পাহাড়ের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।একে কেউ বলেন পাতাল  ড্যাম আবার কেউ এর নীল রঙের জলের জন্য একে নীল ড্যামও বলে থাকেন। মেদিনীপুরের গনগনির মতো অনেকে মার্বেল লেকের পার্শবর্তী অঞ্চলকে আমেরিকার অ্যারিজোনার কলোরাডো নদী ঘিরে ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’–এর সঙ্গে তুলনা করেন।
 
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
বামনী ফলস
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
মুরুগুমা ড্যাম
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
সুসাইড পাহাড়
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
আপার ডাম
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
খয়েরবেড়া ডাম
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
লহরিয়া শিব মন্দির
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
দেউলঘাটা মন্দির
Tourism | Puruliya | Ayodhya Pahar । অযোধ্যা পাহাড়
কংসাবতী নদী, দেউলঘাটা
এছাড়াও অযোধ্যা পাহাড় ঘিরে বহু জায়গা আছে যা দেখতে পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়। এদের মধ্যে  উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি হলো লোয়ার ড্যাম, আপার ড্যাম, বামনী ফলস, টুর্গা ফলস, টুর্গা ড্যাম, মাঠা পাহাড়,  খায়েরবেড়া ড্যাম, দেউলঘাটা মন্দির, লহরিয়া মন্দির, মুরুগুমা ড্যাম  প্রভৃতি।

 

     হাওড়া থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস (০৪.৫০), হাওড়া চক্রধরপুর এক্সপ্রেস (১২.০৫) এবং সাঁতরাগাছি থেকে রূপসী বাংলা (০৬.২৫) এক্সপ্রেসে পুরুলিয়া যাওয়া যায়। স্টেশনে নেমে টোটো করে মাথা পিছু ২০ টাকা ভাড়ায় বাস স্ট্যান্ড পৌঁছে বাসে করে ৪৫ টাকা মাথা পিছু  ভাড়ায় অযোধ্যা পাহাড় হিল টপে পৌঁছে যাওয়া যায়। এছাড়া প্রাইভেট গাড়িতে (প্রায় ২৫০০ টাকা ) ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটে পৌঁছনো যায়।

ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বুকিং করতে হলে – Website:-https://www.irctc.co.in/nget/train-search

    অযোধ্যা পাহাড় বেড়াতে গেলে সবচেয়ে ভালো থাকার জায়গা হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত যুব আবাস।  প্রায় ৯৬ জনের উপর পর্যটক এখানে বিভিন্ন মানের ঘর নিয়ে থাকতে পারে। অনলাইনে সহজেই এই যুব আবাস বুক করা যায়। আর অফলাইনে করতে গেলে কলকাতার মৌলালী থেকে বুক করা যায়। (website:- youthhostelbooking.wb.gov.in) । এছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি হোটেল ও রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অযোধ্যা হিল টপ টুরিস্ট লজ, অযোধ্যা গেস্ট হাউস, হোটেল হিল কুইন ইত্যাদি। 

 

May You Like:

Leave a Comment